রোনালদো আর আনচেলত্তি – যখন দুজনই ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদে
পিএসজি, রিয়াল মাদ্রিদ, না ম্যানচেস্টার সিটি? এর মধ্যে রিয়ালের নামটা সম্ভবত কেটে ফেলতেই হচ্ছে।
জুভেন্টাস ছেড়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সম্ভাব্য তিন গন্তব্যস্থল হিসেবে দিনজুড়ে এই তিনটি ক্লাবের নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। পিএসজিকে নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে সবার আগে। বাজারে ফিসফাস, লিওনেল মেসি আসায় কিলিয়ান এমবাপ্পে নাকি পিএসজিতে থাকতে চাইছেন না। তাঁর চোখ রিয়াল মাদ্রিদে, স্প্যানিশ ক্লাবটির চোখও তাঁর প্রতি। এমবাপ্পে চলে গেলে তাঁর শূন্যতা পূরণে রোনালদোকে আনতে পারে পিএসজি, মেসি-নেইমার-রোনালদোর ঐতিহাসিক ত্রয়ী বানাতে পারে, এমন গুঞ্জন শোনা গেছে।
পরের গুঞ্জন রিয়ালকে ঘিরে। ক্লাবটি নাকি তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতাকে ফিরিয়ে আনতে চায়—এমন গুঞ্জন তৈরি হয় স্প্যানিশ ফুটবলে। কিন্তু স্পেনেরই সংবাদমাধ্যম মার্কা জানিয়েছে, কয়েক মাস আগে রোনালদো ফেরার ইচ্ছার কথা রিয়ালকে জানালেও লস ব্লাঙ্কোরা তাঁর প্রতি আগ্রহী নয়। এর মধ্যেও কাল থেকে গুঞ্জন উঠেছে, রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় ক্লাবটিতে ফেরার রাস্তা সুগম হচ্ছে রোনালদোর। কিন্তু আনচেলত্তি আজ নিজেই টুইট করে জানিয়েছেন, পর্তুগিজ তারকাকে সই করানোর কথা তিনি ভাবছেন না।
এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মেয়াদ ফুরাতে আর ১৪ দিন বাকি। রোনালদোর এজেন্ট হোর্হে মেন্দেজ নাকি তাঁর মক্কেলকে বেচার জন্য দেনদরবার শুরু করেছেন ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে—জুভেন্টাস ফরোয়ার্ডকে নিয়ে এটাই সর্বশেষ গুঞ্জন। ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যম করিয়েরে দেল্লো স্পোর্ত লিখেছে, মেন্দেজ নাকি সিটির সঙ্গে দর–কষাকষি শুরু করেছেন। তবে এই তিন ক্লাবের মধ্যে রিয়ালের নামটা কেটে ফেলতে হচ্ছে কোচ আনচেলত্তির টুইটের পর
ক্রিস্টিয়ানো রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি। তার প্রতি আমার ভালোবাসা ও সম্মান থাকবে। আমি তাকে কখনো সই করানোর কথা ভাবিনি। আমরা সামনে তাকাচ্ছি—টুইট করেছেন আনচেলত্তি।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এল চিরিঙ্গিতো এর আগে জানিয়েছিল, রোনালদোকে ফিরিয়ে আনতে আনচেলত্তি নাকি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। ইতালিয়ান কোচ সম্ভবত এই গুঞ্জনের জবাবেই টুইটটি করলেন। তবে এখানেও গুঞ্জনের শেষ নয়। আনচেলত্তির টুইটের স্ক্রিনশট নিজেদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দিয়েছে এল চিরিঙ্গিতো। সেখানে রোনালদোর বান্ধবী জর্জিনা রদ্রিগেজ মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, হাহাহাহা।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ভবিষ্যৎ কোথায়?
এদিকে রোনালদো জুভেন্টাসের সঙ্গে তাঁর চুক্তির শেষ ১২ মাসে পা রেখেছেন। তিনি নাকি ইতালিয়ান ক্লাবটি ছাড়তে চান এবং সেটা ৩১ আগস্ট দলবদলের শেষ দিনের আগেই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কা লিখেছে, জুভেন্টাস রোনালদোর বেতনের বোঝা থেকে মুক্তি পেতে চাইছে। এই মৌসুমে জুভেন্টাসের ডাগআউটে ফেরা কোচ মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রি দলের খোলনলচে বদলাতে চাইছেন। খেলোয়াড় রোনালদোকে নিয়ে সংশয় নেই আলেগ্রির, কিন্তু নতুন খেলোয়াড় কিনতে রোনালদোর বেতনের বোঝা থেকে মুক্তি চায় জুভেন্টাস।
আলেগ্রির চোখ মাঝমাঠে মানুয়েল লোকাতেল্লি আর মিরালেম পিয়ানিচের যেকোনো একজন অথবা দুজনকেই আনা। এর মধ্যে লোকাতেল্লির জন্য সাসসুয়োলোর সঙ্গে ৩ কোটি ৫০ লাখ ইউরোর পাশাপাশি শর্তসাপেক্ষ বোনাসের বিনিময়ে জুভেন্টাসের চুক্তি হয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করছেন ফাব্রিজিও রোমানোসহ ইউরোপের বিশ্বস্ত অনেক সাংবাদিক।
এখন বার্সেলোনা থেকে পিয়ানিচকেও নেবে কি না জুভেন্টাস, সেটিই দেখার। বেতনের বোঝা কমাতে তৎপর বার্সা যে দলে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে ওঠা পিয়ানিচকে বিদায় করতে প্রস্তুত, তা তো না বললেও চলে! তবে তার আগে রোনালদোকে বিক্রি করতে চায় জুভেন্টাস।
রোনালদোকে আদর্শ মেনে বেড়ে ওঠা এমবাপ্পের গতিপথই ঠিক করে দেবে রোনালদোর ভবিষ্যৎ?
এসবের মধ্যে কাল রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুঞ্জন উঠেছিল, পিএসজিকে না বলে দিতে পারেন এমবাপ্পে। সে ক্ষেত্রে অনেকেই দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে নেন। কারণ, মার্কা জানিয়েছে, আগামী ১৪ দিনের মধ্যে রিয়াল শুধু একজন খেলোয়াড়কেই সই করানোর চেষ্টা করবে—এমবাপ্পে। ওদিকে পিএসজি নাকি ভেবে রেখেছে, এমবাপ্পে গেলে তাঁর জায়গায় রোনালদোকে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হবে।
সিটির সম্ভাবনাও একেবারে ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না। টটেনহাম তারকা হ্যারি কেইনকে কেনার চেষ্টা করছে ইংলিশ ক্লাবটি। কেইনকে না পাওয়া গেলে তাঁর বিকল্প হিসেবে নাকি রোনালদোকে ভেবে রেখেছে সিটি।
যদিও দলবদলের খবরে বিশ্বস্ত হয়ে ওঠা ইতালিয়ান সাংবাদিক ফাব্রিজিও রোমানো টুইটে রোনালদোর দলবদলের গুঞ্জন নিয়ে লিখেছেন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পরিস্থিতি: জুভেন্টাস সব সময়ই বলেছে, তারা এখনো কোনো প্রস্তাব পায়নি। পিএসজি এই মুহূর্তে রোনালদোকে চায় না, তাদের পরিকল্পনা এমবাপ্পেকে ধরে রাখা। ম্যানচেস্টার সিটিও এগিয়ে আসছে না, তারা হ্যারি কেইনকেই চায়।
ইএসপিএনের সাংবাদিক ইউলিয়েন লরেনসের টুইট, এই গ্রীষ্মে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে নিয়ে ভাবছে না পিএসজি। এই গ্রীষ্মে এমবাপ্পেকেও বিক্রি করতে চায় না ক্লাবটি।