হোক তা বোলিং সহায়ক পিচ। তারপরও মোস্তাফিজ-সাকিব-নাসুমদের অর্জনকে ছোট করে দেখা যাবে না। পিচের চরিত্র বুঝে বোলিং করতে পারাও তো কৃতিত্ব।
মোস্তাফিজুর রহমান আবার নিজেকে ফিরে পেয়েছেন। বাঁহাতি পেসার হিসেবে নিজের কৌণিক ডেলিভারিকে প্রতিপক্ষ ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের অফস্ট্যাম্প ও তার আশপাাশে পরাস্ত করা, হঠাৎ গতি কমিয়ে স্লোয়ারে বিভ্রান্তিতে ফেলে দেয়া এবং কাটার ছুড়ে বোকা বানানোর কাজটি দারুণভাবে করছেন। সে কারণেই গত ১০ ম্যাচে তার নামের পাশে যোগ হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ, ১৮ উইকেট।
এছাড়া বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদও শেরে বাংলার স্লথ পিচের সর্বোচ্চ ফায়দা নিয়ে সাফল্য পাচ্ছেন। এ বাঁহাতি স্পিনার এমন পিচে শেষ ৯ ম্যাচে পতন ঘটিয়েছেন ১৫ উইকেটের। দুই-দুইবার ৪ উইকেটও পেয়েছেন।
সাথে সাকিব আল হাসান, শরিফুল ইসলাম, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও শেখ মেহেদি হাসান ধারাবাহিকভাবে ভালো ও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে যাচ্ছেন। আর তাই অস্ট্রেলিয়ার পর হোম অব ক্রিকেটে খাবি খাচ্ছেন কিউই ব্যাটসম্যানরাও।
কিন্তু স্লো পিচে বোলাররা নিজেদের কাজটা দক্ষতার সাথে সম্পাদন করতে পারলেও ব্যাটসম্যানরা পারেননি। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান এবং তরুণ নুরুল হাসান সোহান বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ম্যাচ ভালো খেলেছেন। ওপেনার নাইম শেখও প্রায় নিয়মিত রান করেছেন। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী ও ভয়ডরহীন ব্যাটিং যা বলেন, তা দেখাতে পারেননি কেউ। এককথায় ব্যাটিংটা তেমন ভাল হচ্ছে না।
এখন ব্যাটসম্যানদের প্রায় সবার স্ট্রাইকরেট গেছে কমে। একজনও স্বাভাবিক ছন্দে নেই। এমনকি সাকিব আর মুশফিকের মত অভিজ্ঞ আর বিশ্বমানের পারফরমারও স্লো উইকেটে নিজেদের স্বাভাবিক ব্যাটিং করতে পারছেন না। মোদ্দা কথা, অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের সাথে হওয়া ৯ ম্যাচে বাংলাদেশ ৭টিতে জিতলেও ব্যাটসম্যানদের অ্যাপ্রোচ ও পারফরম্যান্স দেখে মন ভরেনি কারো।
বরং ব্যাটসম্যানদের কেমন আড়ষ্ট মনে হচ্ছে। নিয়মিত বিরূপ উইকেটে ব্যাটিং করতে করতে তাদের আত্মবিশ্বাস ও নিজ সামর্থ্যের প্রতি আস্থাও গেছে কমে। আর তাই ৬০ থেকে ৯০-১০০ রান তাড়া করে তারা জিতে যাচ্ছেন, কিন্তু লক্ষ্য ১১৫-১২০ পার হলেই খেই হারিয়ে ফেলছেন।
ধরেই নেয়া যায়, ওমানে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব আর আরব আমিরাতে মূল বিশ্বকাপে উইকেট হবে শতভাগ ব্যাটিং সহায়ক, না হয় স্পোর্টিং। সেখানে আর এই ৮০-৯০ রানের পিচ থাকবে না। টি-টোয়েন্টির স্বাভাবিক গড়পড়তা ১৫০-১৬০ রান করতে না পারলে নিশ্চিতই হারের মুখ দেখতে হবে। রান তাড়া করতে হলেও সেটা দেড়শর কম হবে না বেশিরভাগ ম্যাচে। তখন কিভাবে মানিয়ে নেবেন ব্যাটসম্যানরা?
দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু চিন্তিত নন। তিনি মনে করেন, ব্যাটসম্যানরা টি-টোয়েন্টি আসরে মাঠে নামার আগে এক মাসের বেশি সময় পাবে। সেটা অন্যরকম কন্ডিশনের সাথে মানিয়ে নিতে যথেষ্ট সময়।
তাই নান্নুর ধারণা, এখন টাইগাররা শেরে বাংলার স্লো ও লো পিচে এভাবে খেললেও জায়গামতো নিজেদের ঠিকই মেলে ধরতে পারবে। কেননা নিজেদের ভিন্ন কন্ডিশনে মানিয়ে নেয়ার মতো পর্যাপ্ত সময় হাতে থাকবে।
প্রধান নির্বাচকের ভাষায়, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হতে প্রায় এক মাসের মতো সময় আছে। সেদিক থেকে নিজেদের গুছিয়ে নেয়ার যথেষ্ট সময় আছে।’
নিজের ক্যারিয়ারের প্রসঙ্গ টেনে নান্নু বলেন, ‘আমিও একজন ব্যাটসম্যান ছিলাম। আমি বিশ্বাস করি, নিজে পরিকল্পনা করে যদি একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই ভালো করা সম্ভব।