তালেবান ক্রিকেট ভালোবাসে—আফগানিস্তানের ক্রিকেট কর্তাদের স্বস্তি আর আশার জায়গা এটিই। শীর্ষ এক তালেবান নেতার কথাও তেমনই। পাকিস্তানের একটি গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ক্ষমতায় বসলে তারা নাকি ক্রিকেটের আরও উন্নতি করবে। তালেবান আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ক্রিকেট না হয় চলবে, কিন্তু দেশটির অন্য খেলাগুলোর কী হবে! বিশেষ করে মেয়েদের ফুটবল?
রাজধানী কাবুল তালেবান নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর আতঙ্কে রয়েছেন আফগানিস্তানের ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা। গত কয়েক বছর ধরেই ফুটবলে আফগানিস্তান ভালো করছে। এশীয় ফুটবলে মধ্যম মানের শক্তি হিসেবে দেশটি ইতিমধ্যেই নিজেদের মেলে ধরেছে। দক্ষিণ এশীয় ফুটবলে শিরোপা জিতেছে, মোটামুটি সমীহ জাগানো দল হিসেবেই পরিচিত তারা। তালেবান আফগানিস্তানের ফুটবল নিয়ে কিছু না বললেও আফগান ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা শঙ্কিত ও আতঙ্কিত অন্য এক কারণে। তারা যে মেয়েদের ফুটবল চালু করেছেন। আর এটিই যে তালেবানের চোখে বড় অপরাধ। কাবুল তালেবান নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম আউটলুক।
ভারতের দিল্লিভিত্তিক এক ফুটবল কর্মকর্তা আউটলুককে জানিয়েছেন, আফগান ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, মেয়েদের ফুটবল চালু করার জন্য তাঁরা তালেবান–রোষে আক্রান্ত হতে পারেন। তাঁদের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে, কাবুল তালেবান নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। বিমানবন্দর এলাকা মোটামুটি নিরাপদ। কিন্তু দ্রুতই তালেবান সেটি বন্ধ করে দিতে পারে।
তালেবান শাসনে আফগানিস্তানে নারীর অধিকার হুমকিতেই থাকবে বলে শঙ্কা সবার
তালেবান শাসনে আফগানিস্তানে নারীর অধিকার হুমকিতেই থাকবে বলে শঙ্কা সবাররয়টার্স ফাইল ছবি।
প্রভাকরণ নামের সেই ফুটবল কর্মকর্তা এরই মধ্যে বিষয়টি ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন। তবে এখনো সেখান থেকে কোনো সাড়া মেলেনি বলে জানা গেছে। এদিকে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনও আফগানিস্তান ফুটবল ফেডারেশনের কর্তাদের কাছ থেকে এমন কোনো অনুরোধ পায়নি বলে জানিয়েছে।
২০০৭ সালে আফগানিস্তানে নারী ফুটবল দল গঠিত হয়। তবে দেশটির নারী ফুটবল সব সময়ই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে নেতিবাচক কারণে। ২০১৮ সালে আফগান নারী ফুটবল দল গঠনের ব্যাপারে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালনকারী সাবেক ফুটবলার খালিদা পাপল আফগানিস্তান ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির বিরুদ্ধে নারী ফুটবলারদের যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তোলেন। তিনি নিজেই তদন্ত করে পাওয়া এ–সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে দিয়েছিলেন বিদেশি গণমাধ্যমের হাতে। এরপর বিভিন্ন হুমকির মুখে তিনি দেশত্যাগ করেন।
সেই খালিদা পাপল বলেন, তালেবান শাসনের অধীনে নারীর কোনো অধিকারই নেই। তাদের স্কুলে, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার অধিকার হরণ করা হবে, এমনকি চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার অধিকারও তারা হারাবে। তাদের বাড়িতেই বন্দী হয়ে থাকতে হবে। আমরা যখন আফগানিস্তানে মেয়েদের ফুটবল চালু করি, সেটি আফগান সংস্কৃতিতেই ছিল নতুন এক ঘটনা। খেলায় যে নারীর অংশগ্রহণ থাকতে পারে, এ ব্যাপারটিই ছিল না আফগানিস্তানে।
এদিকে আফগানিস্তান তালেবান নিয়ন্ত্রণে চলে আসার পর থেকেই তীব্র আতঙ্কে ভুগছেন দেশটির নারী ফুটবলাররা। খালিদা পাপল জানিয়েছেন, তিনি কয়েক দিন ধরেই আফগান নারী ফুটবলারদের ফোনকল আর খুদে বার্তা পাচ্ছেন। নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তারা, আতঙ্কিত তাঁদের পরিবার।
পাপল জানিয়েছেন এসব ফোন ও খুদে বার্তায় সবাইকে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিতে বলা ছাড়া আর কিছুই করার থাকছে না। তিনি সবাইকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে থাকারও পরামর্শ দিচ্ছেন। এমনকি তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সব লেখা ও পোস্ট মুছে ফেলতেও বলেছেন, পুরো ব্যাপারটাই আমার জন্য খুব দুঃখের। এতগুলো বছর ধরে আমরা খেলার মাঠে নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে কাজ করেছি, তাদের উৎসাহিত করেছি খেলায় অংশ নিতে। অথচ, আজ আমিই তাদের পালিয়ে যেতে বলছি। লুকিয়ে থাকতে বলছি। এটা করছি কারণ আমি জানি মেয়েগুলোর জীবন হুমকিতে।